১৮ মে ২০২৪, শনিবার, ০১:৪৯:১৩ অপরাহ্ন


যেমন হবে কোরবানির পশু
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৩
যেমন হবে কোরবানির পশু ফাইল ফটো


আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৪)

কোরবানি কি?

আরবি করব বা কোরবান (قرب বা قربان) শব্দটি উর্দূ ও ফার্সিতে (قربانى) কোরবানি নামে রূপান্তরিত। এর অর্থ হলো-নৈকট্য বা সান্নিধ্য। কোরআনুল কারিমের কোরবানির একাধিক সমার্থক শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। তাহলো-

>نحر অর্থে। আল্লাহ তাআলা বলেন- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য নামাজ এবং কোরবানি আদায় করুন। এ কারণে কোরবানির দিনকে يوم النحر বলা হয়।

> نسك অর্থে। আল্লাহ তাআলা বলেন- قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য।’ (সুরা আনআম: আয়াত ১৬২)

> منسك অর্থে। আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘ لِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكاً ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কোরবানির বিধান রেখেছি।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৪)

> الاضحى অর্থে। হাদিসের ভাষায় কোরবানির ঈদকে (عيد الاضحى) ‘ঈদ-উল-আজহা’ বলা হয়।

ইসলামি নীতিতে কোরবানি হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার পাওয়ার আশায় নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। পবিত্র কোরআনুল কারিমের তিনটি স্থানে কোরবানির উল্লেখ আছে যার একটি পশু কোরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কোরবানি বলা হয়ে থাকে।

কোরবানির পশুর ধরণ হচ্ছে-

১. উঁট;

২. গরু, মহিষ;

৩. ছাগল, দুম্বা বা মেষ।

এস প্রাণী কোরবানির পশু হওয়ার সপক্ষে মহান আল্লাহ তাআলার বাণী-

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكاً لِيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَى مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ

‘আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি। তাদেরকে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হতে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে সেগুলোর উপর তারা যেন আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। কারণ, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ, কাজেই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করো আর সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩৪)

আর এখানে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হলো- উঁট, গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা বা মেষ। আর কোরবানিতে একটি ছাগল, মেষ বা দুম্বা একজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে একটি উঁট বা গরু সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। এর পক্ষে দলিল হলো নবিজির একটি হাদিস-

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে উঁট ও গরুর ক্ষেত্রে সাতজনকে একটি পশুতে ভাগ নিতে নির্দেশ করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম ১৩১৮)

কোরবানির পশুতে যেসব গুণ থাকা আবশ্যক: আর তা হচ্ছে দুটি-

১. পশুর শরিয়ত নির্ধারিত বয়স হওয়া। আর তা হচ্ছে-

> উট: উঁটের বয়স পাঁচ বছর সম্পূর্ণ হওয়া,

>গরু: গরুর বয়স দুই বছর সম্পূর্ণ হওয়া,

> ছাগল: ছাগলের বয়স এক বছর সম্পূর্ণ হওয়া,

> মেষ বা দুম্বা: মেষ বা দুম্বার বয়স ছয় মাস পূর্ণ হওয়া।

এর কম বয়সের পশু হলে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট হবে না। দলিল হিসেবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাদিসে এসেছে-

لَا تَذْبَحُوا إِلَّا مُسِنَّةً إِلَّا أَنْ يَعْسُرَ عَلَيْكُمْ فَتَذْبَحُوا جَذَعَةً مِنْ الضَّأْنِ

‘তোমরা দাঁতা পশু ছাড়া অন্য কোনো পশু (কোরবানিতে) জবাই করবে না। তবে যদি তোমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে তাহলে দুম্বা বা মেষের জাযআ (যার বয়স ছয় মাস) জবাই করবে।’ (মুসলিম ১৯৬৩)

২. কোরবানির পশু চারটি দোষ থেকে মুক্ত হওয়া। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে যা থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। আর তাহলো-

> স্পষ্ট কানা হওয়া। আর দুই চোখ অন্ধ হওয়া আরও বড় দোষ, তাই তা কোরবানির জন্য যথেষ্টে হবে না।

> স্পষ্ট রোগী হওয়া। যেমন- চুলকানি-পাচড়া বা অন্য কোনো বড় ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া।

> স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া এবং এমন অচল হওয়া, যা চলতে পারে না। তাই কোনো একটি পা কাটা হওয়া আরও বড় দোষের।

> আর এমন দুর্বল হওয়া, যার শরীরে কোন মাংস নেই।’ (ইবনে মাজাহ ৩১৪৪)

হজরত ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার মুয়াত্তা মালিকে হজরত বারা বিন আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কোন কোন ধরণের পশু কোরবানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে? তখন তিনি নিজ হাতের ইঙ্গিতে বলেন- চারটি দোষযুক্ত পশুর কোরবানি করা থেকে বিরত থাকবে। আর হজরত বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ হাতের ইশারা করতেন এবং বলতেন- আমার হাত আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত থেকে খাট। (তিনি যে চারটি দোষের কথা বলেন তাহলো)- স্পষ্ট খোঁড়া হওয়া, স্পষ্ট কানা হওয়া, স্পষ্ট রোগী হওয়া এবং এমন দুর্বল হওয়া যার গায়ে কোন মজ্জা নেই। তবে এর থেকে ছোট ধরণের দোষ যেমন, পশুর কান কাটা বা সিং ভাঙ্গা হওয়া; এমন পশুর কোরবানি করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়), কিন্তু সঠিক মতে তার কোরবানি শুদ্ধ হওয়াতে কোন বাধা নেই।’

কোরবানির পশুর গুণ

আর কোরবানির পশুতে যে সব গুণ থাকা উত্তম, তাহলো-

> কোরবানির পশু মোটা হওয়া;

> শক্তিশালী হওয়া;

> দৈহিক গঠনে বড় হওয়া এবং

> দেখতে সুন্দর হওয়া।

সুতরাং কোরবানির পশু যত ভালো হবে ততই মহান আল্লাহর কাছে ততবেশি প্রিয় হবে। আর হাদিসে পাকে এসেছে, আল্লাহ সুন্দর ও উত্তম, তাই তিনি সুন্দর ও উত্তম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।