২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৩:৪২:৩৬ পূর্বাহ্ন


যৌনতার ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন অর্চনা !
সুমাইয়া তাবাস্সুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১২-২০২৩
যৌনতার ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন অর্চনা ! যৌনতার ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন অর্চনা !


জামিনে মুক্তি পেলেন ওড়িশার মহিলা ব্ল্যাকমেলার অর্চনা নাগ। গ্রেফতার হওয়ার ১৪ মাস পরে ওড়িশার জেল থেকে স্বামীর হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এলেন তিনি। তাঁকে ঠিক ব্ল্যাকমেলার না বলে ‘সিরিয়াল ব্ল্যাকমেলার’ বলাই ভাল। প্রভাবশালীদের যৌনতার জালে জড়িয়ে ব্ল্যাকমেল করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল অর্চনাকে। ফেঁসেছিলেন তাঁর স্বামী জগবন্ধু চাঁদও। হাইকোর্টে অর্চনার বিরুদ্ধে মামলাও চলছিল। আজ ওড়িশা হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে তাঁকে।

এই অবধি পড়ে অর্চনাকে মামুলি অপরাধী ভাবা ভুল হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাঁর নাম দিয়েছে ‘মক্ষীরানি’। আর এই মক্ষীরানি যে কে ছিলেন আর কীভাবে ওড়িশার ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন, সে কাহিনি হার মানিয়ে দেবে যে কোনও টানটান বলিউড সাসপেন্স থ্রিলারকেও। এই অর্চনাকে ফাঁদে ফেলতে হিমশিম খেতে হয়েছিল পুলিশকে। তাঁর সম্পত্তির বহর দেখে তাজ্জব হয়েছিলেন দুঁদে ইডির আধিকারিকরাও।

এখন জেনে নেওয়া যাক কে এই অর্চনা নাগ? কালাহান্ডির খুবই গরিব পরিবারে জন্ম অর্চনার। মা লোকের বাড়ি কাজ করতেন। স্কুল শেষে ভুবনেশ্বরে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। থাকতেন সেখানেই। তারপর একটি বেসরকারি সংস্থায় ছোটখাটো কাজ পান অর্চনা। পরে সেই কাজ ছেড়ে বিউটি পার্লারে কাজ শুরু করেন।  এখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বালেশ্বরের বাসিন্দা জগবন্ধু চাঁদের। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৮ সালে তাঁরা বিয়ে করেন।

এই অবধি সব ঠিকই ছিল। কিন্তু অর্চনার ধনী হওয়ার লোভই বিপদ ডেকে আনে। অল্প সময় প্রচুর টাকা উপার্জন করার নেশা চেপে বসে অর্চনার। ফন্দি করে তাই পার্লারের আড়ালে মধুচক্রের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। কিন্তু কোনওটাই স্বামীর আড়ালে নয়। জগবন্ধু পুরনো একটি গাড়ির শোরুম চালাতেন। আর সেই সুবাদেই বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক, প্রোমোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। আর এই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েই বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে কৌশলে অর্চনার পার্লারে নিয়ে আসতেন তিনি। সেখানেই ফাঁসিয়ে সেইসব ব্যবসায়ীর সঙ্গে যৌনতায় মত্ত হতেন অর্চনা। সে ছবি ও ভিডিও তুলতেন স্বামী জগবন্ধু। পরে সেই ভিডিও দেখিয়েই চলত ব্ল্যাকমেলিং।

এইভাবেই মধুচক্রের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে অর্চনার। লজ্জা ও গুজব ছড়ানোর ভয়ে সেইসব ব্যবসায়ীরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকতেন। এইভাবে একে একে সমাজের বিত্তশালীদের সঙ্গে আলাপ জমিয়েছিলেন অর্চনা ও তাঁর স্বামী জগবন্ধু। তাঁদের কখনও নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তিদের চাহিদা মতো মহিলাও সরবরাহ করতেন। আর সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিও করতেন তাঁর স্বামী জগবন্ধু। তার পর সেই ছবি এবং ভিডিও দেখিয়ে প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেল করে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। শুধু মহিলা সরবরাহ করাই নয়, অর্চনা নিজেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মোবাইলে সেক্স-চ্যাট করা, তাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

ওড়িশা পুলিশই জানিয়েছিল, কম করেও ১৮ জন বিধায়ককে ফাঁদে ফেলেছিলেন অর্চনা ও জগবন্ধু। সেই ফাঁদে জড়িয়েছিলেন রাজ্যের দু’জন মন্ত্রীও। রাজ্য বিজেপির ভুবনেশ্বর শাখার সভাপতি বাবু সিং একবার অভিযোগ করেছিলেন, অর্চনার সঙ্গে নাকি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে ২৫ জন রাজনীতিকের।

অর্চনার যে কত সম্পত্তি তার হিসেবনিকেশ করে হিমশিম খেতে হয়েছে ইডির অফিসারদের। একাধিক বিলাসবহুল বাংলো,  ভুবনেশ্বরে ৩ কোটি টাকার প্রাসাদোপম বাড়ি, নাখারার কাছে একটি সুবিশাল ফার্মহাউস রয়েছে তাঁর। তাছাড়া একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে অর্চনার। গাড়ির একটি শোরুমও আছে অর্চনার।

পুলিশ জানিয়েছে, ওড়িশার ৫০ জন খ্যাতনামী ব্যক্তির একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন অর্চনা। মধুচক্রের শিকার বানিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সম্প্রতি ওড়িশার এক চলচ্চিত্র প্রযোজক অর্চনার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলের অভিযোগ দায়ের করেন। এক মহিলাকে ডেকে তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে প্রযোজককে ব্ল্যাকমেল করতেন বলে অভিযোগ। নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে প্রযোজকের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন।  তবে তার আগেই ধরা পড়ে যান তিনি। গত ৬ অক্টোবর অর্চনাকে গ্রেফতার করে ওড়িশা পুলিশ। গ্রেফতারের পর ওড়িশার ঝড়পাড়া স্পেশাল জেলে রাখা হয় তাঁকে। ধরা পড়েন অর্চনার স্বামী জগবন্ধুও। এখন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন দুজনেই।