০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০১:২৪:৪৮ অপরাহ্ন


গাছকে দেখেও শরীরী প্রেম জাগতে পারে, সনিয়া
তামান্না হাবিব নিশু :
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২৩
গাছকে দেখেও শরীরী প্রেম জাগতে পারে, সনিয়া গাছকে দেখেও শরীরী প্রেম জাগতে পারে, সনিয়া


তিনি গাছের সঙ্গে একলা হতে চান। একান্ত মুহূর্তে শরীরে শরীর জড়িয়ে নেন আষ্টেপৃষ্ঠে। তাতেই তাঁর সুখ। সম্ভোগ।

নিজেকে সবুজ যৌনতার পূজারী বলে পরিচয় দেন সনিয়া সেম্যোনোভা। ৪৫ বছরের এই যুবতী একজন সেল্ফ ইন্টিমেসি কোচ। অর্থাৎ নিজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শেখান। সনিয়া জানিয়েছেন, বছর কয়েক হল এক বুড়ো ওক গাছের প্রেমে পড়েছেন তিনি।

কী ভাবে প্রেমে পড়লেন, কেমনই বা সেই প্রেম, তার বিস্তারিত কাহিনি শুনিয়েছেন সনিয়া। জানিয়েছেন, এক জন প্রেমিকা সব সময়েই তাঁর প্রেমিকের মধ্যে কিছু না কিছু গুণের সন্ধানে থাকেন। তাঁরও তেমন কিছু চাহিদা ছিল। বহু সঙ্গীর মধ্যে অনেক খুঁজেও সেই বৈশিষ্ট্যের খোঁজ পাননি তিনি। তাঁর প্রিয় বুড়ো ওক গাছ সেই চাহিদা মিটিয়েছে। 

সনিয়ার এমন পছন্দ অবশ্য অস্বাভাবিক নয়। বরং এই ধরনের ভাবনা চিন্তা যাঁরা করেন, তাঁদের এক বিশেষ নামও রয়েছে। প্রকৃতির মধ্যেই প্রেম খুঁজে নেওয়া এই ধরনের মানুষকে বলা হয় ইকোসেক্সুয়াল। বাংলায় বলা যেতে পারে ‘সবুজ যৌনতার পূজারী’। এঁরা পৃথিবীকেই নিজের প্রেমিক বা প্রেমিকা বলে ভাবতে ভালবাসেন।

কিন্তু দুটি আলাদা প্রজাতির মধ্যে প্রেম! সেও কি সম্ভব? মানুষের সঙ্গে মানুষের শরীর এবং মনের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, গাছের সঙ্গে মানুষের সেই একই সম্পর্ক তৈরি হয় কী ভাবে? কী করেই বা একটি গাছকে দেখে শরীরী কামনা জাগ্রত হবে? এ সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সনিয়া নিজেই।

নিজের অনুভূতির বর্ণনা দিয়ে সনিয়া বলেছেন, ‘‘গাছকে দেখেও শরীরী প্রেম জাগতে পারে। তবে মানুষের শরীরী প্রেমের সঙ্গে এই প্রেমের কিছু তফাৎ আছে। গাছের সঙ্গে আমি যৌনতায় লিপ্ত হই না।’’

সনিয়া জানাচ্ছেন, এ ব্যাপারে একটা অত্যন্ত ভুল ধারণা রয়েছে যে, সবুজ যৌনতা বা ইকোসেক্সুয়ালিটির অর্থ প্রকৃতি এবং মানুষের মধ্যে যৌনতা। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়।

সনিয়ার কথায়, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে গাছের সঙ্গে এই প্রেমও শরীরী প্রেম। কিন্তু এই প্রেমের সঙ্গে আক্ষরিক অর্থে যৌনতার কোনও সম্পর্ক নেই।

তাঁর নিজের প্রেমের কাহিনিও শুনিয়েছেন সনিয়া। কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা তিনি। ২০২০ সালের অতিমারির সময়ে এখানে এসেছিলেন। সেই সময় প্রতিদিন কাছেপিঠে হাঁটতে বার হতেন সনিয়া। তখনই তাঁর আলাপ ‘প্রেমিকের’ সঙ্গে।

সনিয়ার কথায়, ‘‘সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটতে যেতাম। যতবারই এই গাছের কাছে আসতাম একটা অদ্ভুত অনুভূতি হত ভিতরে। গাছটির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হত। তাকে ছুঁয়ে থাকার অদম্য ইচ্ছে হতো। মাঝে মাঝেই গাছটার গায়ে হেলান দিয়ে শুয়ে বা বসে থাকতাম। তখন থেকেই আমাদের প্রেমের শুরু।’’

বহু বছরের পুরনো ওই ওক গাছ। দু’হাতের বেড় দিয়েও তার গুঁড়িকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরতে পারেন না সনিয়া। দৈর্ঘ্যেও বিরাট। আর এই বিশালত্বেই প্রাণের-মনের-শরীরে আরাম সনিয়ার।

সনিয়া বলেছেন, এই এত বড় একটা জীবন্ত শরীর আমাকে ছুঁয়ে আছে। আমাকে ঘিরে আছে। আমাকে আড়াল করে রেখেছে ভাবলেই শিহরণ হয় শরীরে।

সনিয়া বলেছেন, ‘‘শুধু এই গাছটির উপস্থিতিতেই আমার ভিতরে যে অনুভূতি জাগে, তার জন্য বহু বছর অপেক্ষা করে থেকেছি আমি। গাছটির কাছে এলেই ওকে জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আর একেও আমি শরীরী প্রেমই বলব। ’’

সনিয়ার দাবি, প্রকৃতির প্রতি তাঁর এই যে অনুভূতি, তা অনেকেই অনুভব করেন। শুধু তাঁরা স্পষ্ট করে বলতে পারেন না বা হয়ত এই প্রেমকে মর্যাদা দিতে পারেন না।

উদাহরণ দিয়ে সনিয়া বলেছেন, ‘‘দেখবেন আমরা সব সময় পিকনিক করতে বেড়াতে যাই প্রকৃতির কোলে। মন হালকা করার প্রয়োজন হলেও সবুজের কাছে যাই। খোলা আকাশ খুঁজি। আসলে ভিতরে ভিতরে আমরা সবাই জানি, আমাদের নারীর সম্পর্ক কোথায় বাঁধা আছে। শুধু জোর দিয়ে তা স্বীকার করার ক্ষমতা নেই।’’