৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০২:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ন


ধর্মীয় বিধান পালনে প্রধান ৫ বাধা
ধর্ম ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৪-২০২৪
ধর্মীয় বিধান পালনে প্রধান ৫ বাধা প্রতিকী ছবি


মুসলমান হিসেবে আমরা ইসলাম পালন করি। তবে আমাদের সুবিধা মতো ইসলামের বিধানগুলো মেনে জীবনযাপন করতে চাই। এতে আমদের  ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনে স্বাধীনভাবে ইসলামের পরিপূর্ণ অনুশীলন হয়ে উঠে না। 

বর্তমান সময়েও ইসলাম পালন করা হয়, কিন্তু প্রিয় নবী সা.- এর দেখানো আদর্শ আমদের জীবনে নেই। প্রথাগত ইসলাম অনুসরণ করতে করতে জীবন পার করে দিই। ইসলাম যে সর্বজনীন জীবনব্যবস্থা তা আমাদের জীবনাচার থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। 

সাহাবায়ে কেরাম রা. এলোপাতাড়ি জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে পালন করেননি, বরং নববী আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে প্রকৃত অর্থেই ইসলামের অনুশীলন করেছেন। কাল পরিক্রমায় আমরা শুধু ইসলামের নামটাই ধরে রেখেছি। ইসলামের চিরন্তন চেতনা আর আদর্শের সামান্যও ধরে রাখতে পারিনি। 

যুগে যুগে মিল্লাতে মুসলিমাহ’র আদর্শিক চেতনা কিভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, প্রথাগত ইসলাম কিভাবে আমাদের পালিত আদর্শের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, বিষয়টি আমাদের অনেকর কাছেই অস্পষ্ট। তাই ব্যক্তি ও পরিবার জীবনে ইসলামের কিছুটা অনুশীলন থাকলেও সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনে নেই। এ দু’য়ের মাঝে তফাত করার মতো যোগ্যতাও খতম হয়ে গেছে। 

যেসব বিষয়ের অবর্তমানে আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ দিন দিন ক্ষুণ্ন হতে চলেছে এবং ইসলামি জীবন-বিধান পূর্ণ অনুশীলন করার পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে, সেগুলো মৌলিকভাবে পাঁচ প্রকার।

১. ইসলামকে ভুল প্রচার করা: বর্তমানে প্রচার মাধ্যমের বড় একটা অংশ ইসলামকে ভুল ব্যাখ্যায় প্রচার করছে। মিডিয়া জগতে ইসলামের সঠিক পরিচয় এর চেয়ে ভুল পরিচয়ই বেশি প্রচার করা হয়। এতে প্রভাবিত হয়ে মুসলমানদের বিরাট অংশ সঠিক ইসলামের পরিচয় পায় না। কেউ তো মিডিয়া প্রচারিত ইসলামকেই প্রকৃত ইসলাম মনে করেন। আবার অনেকে ইসলামকে ত্রুটিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা মনে করে এর থেকে দূরে থাকেন।

২. ইসলামবিরোধী জীবনাচার: ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুন, সভ্যতা-সংস্কৃতির মূলে আঘাত হেনে বিজাতীয় সংস্কৃতির তাবেদার হয়ে তাদের লাইফ স্টাইলের অনুসরণে মুসলিম দেশগুলো প্রতিযোগিতামূলকভাবে অগ্রসর হচ্ছে। 

আধুনিকতার নামে বিজাতীয় জীবন ধারা মুসলিম সভ্যতার ফ্যাশন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আর ইসলাম শুধু নামকাওয়াস্তে অন্তঃসারশূন্য অবস্থায় কিছুটা বাকি আছে।

৩. মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধে আঘাত: মুসলমান মুসলমানের ভাই। এই বাঁধন রক্তের বাঁধনের চেয়েও মজবুত। কিন্তু আমাদের যাপিত জীবনের অবস্থা দেখে একথা বলার সুযোগ নেই। ঈমানের সম্পর্কের চেয়ে স্বার্থের টান আমাদের কাছে বেশি প্রিয়। হীন স্বার্থে ভাই ভাইকে খুন করে ফেলি। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিই। এসব দেখে অনেকেই ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।

৪. শিক্ষা ব্যবস্থায় অনৈসলামিক প্রভাব: আমাদের প্রচলিত ও স্বীকৃত শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের ‘ই’ পরিমাণও বাকি নেই। অথচ এর ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মুসলিম পরিবারের সন্তান। ভঙ্গুর এই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাবে তাদের মাঝে ইসলামি মূল্যবোধ নেই বললেই চলে।  তারা নিজেরাই ইসলামের অনুশীলন বোঝে না, জাতির সম্পদ হয়ে তারা জাতিকে কী উপহার দিবে?

৫. আখলাকি অধঃপতন: আচার-ব্যবহার মানুষের সঠিক পরিচয় তোলে ধরে। প্রিয় নবী সা., সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর আচরণে মুগ্ধ হয়ে মানুষ দ্বীনের পথে আসতো। আর আমাদের আচার আচরণ দেখে মানুষ আমাদের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে আর ইসলামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে দেয়।

নবীর পরে দাওয়াত ইলাল্লাহ এর দায়িত্ব এই উম্মতের ওপর ন্যস্ত। আমাদের প্রতিটি কথা কাজ হবে দাওয়াত। আমাদের সবকিছু হবে নমুনা, মডেল। হবে বিজাতীদের জন্য  অনুসৃত আদর্শ। 

উচিত ছিল অমুসলিমরা আমাদের দেখে ইসলামের ছায়াতলে আসবে। কিন্তু আফসোস করেই বলতে হয়, আমাদের জীবনাচার দেখে দূর্বল মুসলমানরাও ইসলামকে ঘৃণা করে। তবে আমরাই কী দ্বীন পালনের পথে বাধা?