৩০ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:১৬:০৬ অপরাহ্ন


দক্ষিণ আফ্রিকা যদি শিরোপা জেতে, কেন্দ্রে থাকবেন রাইলি রুশো
ক্রীড়া ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২২
দক্ষিণ আফ্রিকা যদি শিরোপা জেতে, কেন্দ্রে থাকবেন রাইলি রুশো রাইলি রুশো। ফাইল ফটো


ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে অনিশ্চয়তার খেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে এই অনিশ্চয়তা যেন আরও বেশি। হান্সি ক্রনিয়ে থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা ক্রিকেটারদের উত্থান ও পতনের মাঝে যে সময়টাতে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটে যায় তখন। এই নাটকীয়তার নতুন নায়ক রাইলি রুশো। যিনি জাতীয় দলে ঢোকার আগেই 'চোকার্স' টুইট করে বিপদে পড়েছিলেন।

এগারো বছর আগে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা বাদ পড়ার পর হতাশ হয়ে ২১ বছর বয়সী রাইলি রুশো একটি টুইটে 'চোকার্স' লিখেছিলেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত একটা শব্দ। চোকার্স দ্বারা বোঝানো হয় যারা চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে কখনো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা হয়নি যে চাপে ভেঙ্গে পড়ার কারণে- স্বভাবতই এই টুইটটি তখনকার দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড, নির্বাচক তো বটেই ক্রিকেটাররাও ভালোভাবে নেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক ফিরদোজ মুন্ডা তার একটি কলামে লিখেছিলেন, "একটা সামাজিক আড্ডায় রুশোর সাথে অনেক ক্রিকেটার হাতও মেলাননি তখন।"

সময় গড়িয়েছে প্রায় এক যুগ, সেই রুশো এখন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের হয়ে আরও একটি বিশ্বকাপ খেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এর মাঝে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্রিকেট খেলা ছেড়েও দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে ক্রিকেট খেলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সই করেছিলেন কোলপ্যাক চুক্তি। এটি এমন এক চুক্তি যার অধীনে কোনও ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের স্থানীয় ক্রিকেটার হিসেবে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে পারবে।

তবে রাইলি রুশো ফিরেছেন, মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকা লম্বা সময় ব্যর্থতার মধ্যেই কাটিয়েছে। বিশেষত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের বড় টুর্নামেন্টগুলোতে। এখন আবারও রুশোকে কেন্দ্র করে আশা ঘনীভূত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে।

ক্রিকেট উপস্থাপক ও ধারাভাষ্যকার হারশা ভোগলে টুইটারে লিখেছেন, "দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ আছে এবং রাইলি রুশোকে কেন্দ্র করে তারা এই মিশনে নামবেন।"


রুশো ফিরে জানান দিয়েছেন তার সামর্থ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘটনার একটি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর ফিরে আসা। ক্যারিয়ার শুরু হতে না হতেই রুশো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট চুক্তি বাতিল করে ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ২০১৬ সালে। ছয় বছর পর চলতি বছরের জুলাই মাসে রুশো দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে মাঠে ফিরেছেন। ফিরেই তিনি কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৫ বলে অপরাজিত ৯৬ এবং ভারতের বিপক্ষে ইন্দোরে কদিন আগেই ৪৮ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেছেন। রুশো এমনই প্রভাব সৃষ্টিকারী একজন ক্রিকেটার, যে তিনি বুঝতেই দেননি এতোগুলো বছর তিনি দলের সাথে ছিলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার দলে ফিরে রুশো ছয় ম্যাচে ২৩১ রান তুলেছেন, ৫৭ গড় ও দুর্দান্ত ১৮০ স্ট্রাইক রেটে। রাইলি রুশো মাঝের বছরগুলোতে সব ধরনের ক্রিকেটেই রান পেয়েছেন, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও এক মৌসুম খেলে তিনি সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ২০১৮-১৯ এ। সেবার ৫৫৮ রান তুলেছিলেন প্রায় ৭০ গড়ে।

রুশো নিজেই বলেছেন চলতি বছরের আগস্টে, এই ছয় বছর বিশ্বের নানা প্রতিযোগিতায় ক্রিকেট খেলে তিনি আরও ভালো ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন। "আমি বিশ্বের নানা প্রান্তে ক্রিকেট খেলেছি এই ছয় বছর। আমি অনুভব করি আমি আরও ভালো ক্রিকেটার হয়ে উঠেছি। আমি কৃতজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরতে পেরে।"

সমারসেট চলতি বছরের ভাইটালিটি ব্লাস্ট টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে এক ম্যাচে ২৬৫ রান তুলেছিল। সেই ম্যাচে রুশো ৩৬ বলে ৯৩ রানের একটি ইনিংস খেলেন। এই ম্যাচটি টনটনের ক্লাবটি জিতেছিল ১৯১ রানে। এই ব্যবধানের সমান রান করতে পারলেই অনেক দল সন্তুষ্ট থাকবে। পুরো মৌসুমে রুশো ৬০০ রান করেছেন ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি লিগে, গড় ছিল ৫০, স্ট্রাইক রেট ১৯৭। একই সাথে পাওয়ার ক্রিকেট ও ধারাবাহিকতার প্রদর্শনীতে রুশো হয়ে উঠেছেন অনন্য।


এক নজরে রাইলি রুশো

রাইলি রুশোর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইনে। এখন তার বয়স ৩৩ বছর। পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে খেলেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৩৬টি ওয়ানডে ম্যাচ, ২১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। রুশো কখনো টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি। তবে তিনি ১০৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তার সাত হাজারের বেশি রান আছে, ১৯টি শতক আছে।