২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৩৩:২০ পূর্বাহ্ন


গাজীপুরে ঘরে ঢুকে কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা !
অনলাইন ডেস্ক :
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৫-২০২৩
গাজীপুরে ঘরে ঢুকে কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা ! গাজীপুরে ঘরে ঢুকে কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা !


গাজীপুরের সালনায় ঘরে ঢুকে কলেজ ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা এবং নিহতের মা ও ২ বোনকে মারাত্মকভাবে জখম করার ঘটনায় একমাত্র আসামি গৃহশিক্ষক মো. সাইদুল ইসলামকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

গত বুধবার (১০ মে) রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এর একটি দল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকার একটি বাদি থেকে সাইদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বাদির মালিক সাইদুলের বন্ধু। ঘাতক সাইদুলের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল র‌্যাবকে জানিয়েছে, ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে নিহত ছাত্রীর বাবা তাকে নিয়োগ দেন। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে তার সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। বিভিন্ন সময় সাইদুল ভিকটিমের প্রতি কু-নজর দেয় এবং একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ৫-৬ মাস আরবি শিখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেয়।

পরবর্তীতে সাইদুল প্রতারণামূলকভাবে গত ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে। পরবর্তীতে সাইদুল বিবাহের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকে। ভিকটিমের পরিবার অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে ভিকটিমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে গাজীপুর সদর থানায় বিভিন্ন সময়ে তাকে উত্যক্ত করার বিষয়ে ভিকটিম একটি অভিযোগ করেন। যার কারনে সাইদুল কিছুদিন ভিকটিমকে উত্যক্ত করা থেকে বিরত থাকে।

র‌্যাব আরও জানায়, কিন্তু গত ২ মাস ধরে ভিকটিমের কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্যক্ত করতে থাকে এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সাইফুল জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাহরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি সাইদুল কোনভাবেই মেনে নিতে না পেরে ভিকটিম ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিমকে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ৭ মে বিকালে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকানে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পর দিন ৮ মে সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় গিয়ে তার রুমে ঢুকে ছুরি দিয়ে মাথায়, গলায়, হাতে এবং পায়ে উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ভিকটিমের চিৎকারে তার মা ও দুই বোন দৌঁড়ে তার ঘরে গিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে সাইদুল ছুরি দিয়ে তাদেরকেও এলোপাথাড়িভাবে কুপিয় জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, তাদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং ভিকটিমের মা ও ছোট ২ বোনের অবস্থা আশংকাজনক হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে তাদের শারিরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে তাদেরকে উত্তরার একটি হাপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসা থেকে দাওরা পাশ করে। সে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। ২ মাস আগে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেন। ঘটনার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য সে নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকার সময়ে গত রাতে র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

ভিকটিমের পরিবারের বরাতে র‌্যাব জানায়, ভিকটিম ২০২০ সালে জয়দেবপুরের একটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে গাজীপুরের চৌরাস্তার একটি কলেজে স্মাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি স্থানীয় একটি বিউটি প্রোডাক্টস অনলাইন শপে চাকরি করতেন। এছাড়াও ভিকটিম উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য কিছুদিন আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে এবং ভিসাসহ আনুসাঙ্গিক নথিপত্র প্রস্তুত করছিল।