২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ০৬:০৯:০১ অপরাহ্ন


সৌম্যের ম্যাচে বাংলাদেশের বড় হার
ক্রিড়া ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
সৌম্যের ম্যাচে বাংলাদেশের বড় হার সৌম্যের ম্যাচে বাংলাদেশের বড় হার


সৌম্য সরকারের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বোলাররা সেই সংগ্রহকে যথেষ্ঠ বানাতে পারলেন না। নিউজিল্যান্ডের টপ অর্ডারদের দৃঢ়তায় বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তাতে নিশ্চিত হয়েছে সিরিজ হারও।

নেলসনে বুধবার বাংলাদেশের দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য ২২ বল আর ৭ উইকেট হাতে রেখে পূরণ করেছে নিউজিল্যান্ড। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করল স্বাগতিকরা।

বল হাতে কখনই জয়ের পথে ছিল না বাংলাদেশ। ১১ ওভারে ৭৬ রানের জুটি গড়ে দিয়ে যান কিউই ওপেনার রাচিন রবিন্দ্র (৩৩ বলে ৪৫)। এরপর দলকে লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যন আরেক ওপেনার উইল ইয়াং ও তিনে নামা হেনরি নিকলস। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ম্যাচের সর্বোচ্চ ১২৮ রানের জুটি।

দুইনই আউট হন সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে। ৯৪ বলে ৮টি চার ও ২ ছক্কায় ৮৯ রান করে হাসান মাহমুদের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন ইয়াং। ৯৯ বলে ৮টি চার ও ১ ছক্কায় ৯৫ রান করে শরিফুলের বলে ক্যাচ তুলে দেন নিকোলস।

বাকি কাজ অনায়াসে সারেস অধিনায়ক টম ল্যাথাম (৩২ বলে ৩৪*) ও টম ব্লান্ডেল (২০ বলে ২৪*)। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা।

অভিষিক্ত রিশাদ হোসেন ৯.২ ওভারে ৬২ রান দিয়েও উইকেটের দেখা পাননি। ৭ ওভারে ৫৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার হাসান মাহমুদ। বোলিং কোটা পূরণ করতে পেরেছেন কেবল মেহেদি হাসান মিরাজ। ১ মেডেনসহ ৪৫ রান দিলেন উইকেট পাননি। অধিনায়ক শান্ত হাত ঘুরিয়েছেন ৫ ওভার। ৩০ রান দিয়ে তিনিও উইকেটশূন্য। অন্য উইকেটটি শরিফুলের।

ব্যাট হাতে গল্পটা কেবল সৌম্যকে নিয়ে। বাকি গল্পনা হতাশার। ১ বল বাকি থাকতে দল গুটিয়ে যায় ২৯১ রানে। সৌম্য একাই করেন ১৫১ বলে ১৬৯ রান। যাতে ছিল ২২টি চার ও ২টি ছক্কা। দেশের বাইরে কোনো বাংলাদেশির এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোনো বাংলাদেশির সর্বোচ্চ ইনিংস এটিই। ২০১৫ বিশ্বকাপে হ‍্যামিল্টনে নিউজিল‍্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

এশিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখন সর্বোচ্চ ইনিংসও সৌম্যর। এই হিসাবে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ২০০৯ সালে কিউইদের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেট।

১১৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকে পৌঁছান এই বাঁহাতি ব্যাটার। দ্বিতীয় শতকটি এসেছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে। ফিফটির পর ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়েছেন মোট চারবার। ৫০-৬০ রানের মাঝে জীবন পেয়েছেন তিনবার। ৯০-এর পর গিয়ে আরেকবার। সে সব কাজে লাগালেন তিনি। এই ওপেনার আউট হন শেষ ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে।

বাংলাদেশের ইনিংসে বিশোর্ধো সংগ্রহ আর একটি। মুশফিকুর রহিমের ৫৭ বলে ৪৫। বাকিরা হতাশ করেছেন এবারও।

৮০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে লড়াইয়ে ফেরায় সৌম্য মুশফিকের ১০৮ বল স্থায়ী ৯১ রানের জুটি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল কিপারের পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন মুশফিক।

১৬ বলে ১২ রান করে দূর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার হন তাওহীদ হৃদয়। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাভার-পয়েন্টে ক্যাচ তুলে ১১ বলে ৬ রান করে ফেরেন লিটন দাস। নাজমুল হোসেন শান্ত এবারও ব্যর্থ। কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে অধিনায়ক সাজঘরের পথ ধরেন ৯ বলে ৬ রান করে। আর আসা-যাওয়ার শুরুটা যার মাধ্যমে সেই এনামুল স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১২ বলে ২ রান করে। দলীয় রান তখন ১১।

৪ উইকেট পড়ার পরই জুটি গড়েন সৌম্য ও মুশফিক। এরপর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ৫৩ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। ২৬ বলে ১৯ রান করে অভিষিক্ত আদিত্য অশোকের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন মিরাজ।

ছক্কার চেষ্টায় ক‍্যাচ দিয়ে ফেরেন তানজিম হাসান। ভাঙে সৌম্যেরে সাথে তার ২৬ বল স্থায়ী ৪০ রানের জুটি। এক ছক্কায় তানজিম ১১ বলে করেন ১৩ রান।

রিশাদ প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান। এরপর আরও তিন বল খেলে আর রান করতে পারেননি। আউট হন কট-বিহাইন্ড হয়ে।

ইস সোদির জায়গায় এদিন ২১ বছর বয়সী আদিত্য অশোককে নামায় নিউজিল্যান্ড। এর আগে দেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি খেলা অশোকের এই ম্যাচ দিয়েই হলো ওয়ানডে অভিষেক। স্বরণীয় ম্যাচে বল হাতে খুব একা ভালো করতে পারেননি তিনি। ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে নিয়েছের কেবল ১ উইকেট।

১০ ওভারে ৫১ রানে ৩ উইকেট নেন জ্যাকব ডাফি। শেষ ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া উইল ও’রর্ক দিনের সেরা বোলার। ৪৭ রানে খরচ করেন তিনি।

নেপিয়ারে শনিবার সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে হোয়াটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জে নামবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৯.৫ ওভারে ২৯১ (সৌম্য ১৬৯, এনামুল ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, হৃদয় ১২, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, তানজিম ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১*, হাসান ০; অতিরিক্ত ১২; মিল্ন ১০-০-৭৪-১, ডাফি ১০-০-৫১-৩, উইলিয়াম ৯.৫-০-৪৭-৩, ক্লার্কসন ৬-০-৩০-১, অশোক ১০-১-৬৩-১, রাচিন ৪-০-১৯-০)।

নিউজিল্যান্ড: ৪৬.২ ওভারে ২৯৬/৩ (ইয়াং ৮৯, রাচিন ৪৫, নিকলস ৯৫, ল্যাথাম ৩৪*, ব্লান্ডেল ২৪*; অতিরিক্ত ৯; শরিফুল ৯-১-৪৯-১, হাসান ৭-০-৫৭-২, তানজিম ৬-০-৫১-০, মিরাজ ১০-১-৫১-০, রিশাদ ৯.২-০-৬২-০, শান্ত ৫-০-৩০-০)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার।