২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৮:১৭:০৪ অপরাহ্ন


বাংলাদেশিদের ভাগ্য ছিনিয়ে নিয়েছে দিল্লি : রিজভী
অনলাইন ডেস্ক:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১২-২০২৩
বাংলাদেশিদের ভাগ্য ছিনিয়ে নিয়েছে দিল্লি : রিজভী বাংলাদেশিদের ভাগ্য ছিনিয়ে নিয়েছে দিল্লি : রিজভী


বাংলাদেশি নাগরিকদের ভাগ্য দিল্লি ছিনিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘অতীতের তিনটি ভুয়া নির্বাচনের মতোই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিল্লির প্রকাশ্য প্রভাবে জনগণ উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বৈঠক বসছে দিল্লিতে। যা নাগরিকদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়ারই অংশ। এটি বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়।’ শুক্রবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ভারতীয় কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) একতরফা ডামি নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপিসহ অধিকাংশ দলবিহীন নির্বাচনে তারা (ভারত) সমর্থন দিচ্ছেন। ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চান। গণতন্ত্র তাদের কাছে এখন অপাঙ্ক্তেয়।

তিনি বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দেশটির গণমাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা যেসব মতামত প্রকাশ করছেন, তা প্রায় সবই তাদের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। সেখানকার পত্রিকায় লেখা হচ্ছে-‘মোদির কৌশলে বাজিমাত করতে সক্রিয় শেখ হাসিনা।’ আরও বিস্ময়ের কথা হচ্ছে, তারা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বহুমত ও সহনশীলতার নীতিকে অগ্রাহ্য করে প্রতিবেশী দেশের স্থিতিশীলতা, অন্য কথায় বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকাকে অপরিহার্য গণ্য করছেন গণতন্ত্রকে বর্জন করে। এক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার বাংলা হলো স্বৈরতন্ত্র! তাদের কথায় স্পস্ট দিল্লি তার নিজ স্বার্থের জন্য গণতন্ত্র হত্যায় মূল ভূমিকা পালন করতে আমাদের দেশের মানুষের বিরুব্ধে অবস্থান নিয়েছে।

রিজভী আরও বলেন, দেশের ১৮ কোটি জনগণ চায় দিল্লি সৎ ও প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করুক। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাক। জনগণের ভোটাধিকার গলাটিপে হত্যার পক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করুক।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তার পূর্বনির্ধারিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে, গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসাবে নাশকতা ও জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। আমরা (বিএনপি) জানতে পেরেছি, একজন ডিআইজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার। এজন্য বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দিয়ে জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন হতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনায় ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়েই তারা জঙ্গি নাটক করে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করেছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তেও একই নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে পারে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, মেরুদণ্ডহীন দলদাস নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার পাঠানো সিট বণ্টনের তালিকায় সিলমোহর দেওয়ার জন্য একটি একতরফা নির্বাচনের নাটকের আয়োজন করেছে। এই নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনারদের কথাবার্তা-আচার-আচরণ রীতিমতো হাস্যকর। গণভবনের সুতোয় পুতুলের মতো নাচছে ইসি। তারা প্রায়ই বিএনপিকেও হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। গোটা দেশের জনগণ জানে, কারা কারা এমপি হবেন সেই তালিকা হয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের জানে কত পার্সেন্ট ভোট কাস্ট করবে। তা-ও তারা গণভবনে বসে ঠিক করে রেখেছেন। নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো ঘোষণা করা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই আরেকটি পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার এসব নাটক বাদ দিয়ে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। অন্যথায় মীরজাফরদের পরিণতি কী হয় তা ইতিহাসে পড়ে নিন।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে ১৮৫ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। এই সময়ে ৬ মামলায় ৫৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বিএনপিসহ মিত্রদের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ : সরকার পতনের একদফা দাবিসহ ভোট বর্জন এবং অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে রাজধানীতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপি। ঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন শুক্রবার এই গণসংযোগ করেন দলটির নেতাকর্মীরা। একই লক্ষ্যে কর্মসূচি পালন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণফোরাম (মন্টু) এবং পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা দলগুলো। পৃথকভাবে ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তিন দিনের ঘোষিত কর্মসূচির লিফলেট বিতরণের আজ শেষ দিন। আগামীকাল রোববার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিসহ মিত্ররা।

শুক্রবার সকালে উত্তরা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের নেতৃত্বে মহাখালীতে, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে সংসদ ভবন ও ধানমন্ডিতে এবং মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিমের নেতৃত্বে ডেমরা রোড থেকে কাজলা বাজারে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন নেতাকর্মীরা। তোপখানা রোডে লিফলেট বিতরণ করেছে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। শাহবাগে কর্মসূচি করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

দুপুরে দৈনিক বাংলার মোড়, কালভার্ট রোড ও ফকিরাপুলে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে ১২ দলীয় জোট। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে এলডিপি। বিজয়নগর এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।

কাকরাইল থেকে নাইটিঙ্গেল, নয়াপল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি হয়ে পুরানা পল্টন মোড় এবং এর আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। বিকালে পল্টনে লিফলেট বিতরণ করেছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।

জামায়াতের লিফলেট ও গণসংযোগ : রাজধানীতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।