২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৩:৪৪:২১ পূর্বাহ্ন


‘কার্থেজের যুদ্ধে’ পরাজিত ফ্রান্স, ইতিহাসের দেশ ইতিহাস লিখল
সুমাইয়া তাবাসুম:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১২-২০২২
‘কার্থেজের যুদ্ধে’ পরাজিত ফ্রান্স, ইতিহাসের দেশ ইতিহাস লিখল ‘কার্থেজের যুদ্ধে’ পরাজিত ফ্রান্স, ইতিহাসের দেশ ইতিহাস লিখল


আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরতম দেশ তিউনিশিয়া, ইউরোপের ইতিহাসে বড় অংশ আছে টিউনিশায়। আর ইতিহাসের দেশ আবার ইতিহাস তৈরি করল। গ্রুপের শেষ খেলায় পরাজিত করল শক্তিশালী ফ্রান্সকে, দিদিয়ের দেঁশের কনফিডেন্সে একটা ধাক্কা।

ইতিমধ্যেই ফ্রান্স শেষ ষোলোয় চলে গেছিল আগের ম্যাচে ডেনিস ডিনামাইটসদের হারিয়ে, ফ্রান্সের কাছে শুধুমাত্র ছিল ৩ পয়েন্ট জোগাড় করে ৯ পয়েন্ট নিয়ে এডুকেশন সিটির স্টেডিয়াম ছাড়া। কিন্তু দেঁশ মনে হয় স্বপ্নেও ভাবেননি তিউনিশিয়া এরকম মরিয়া হয়ে উঠবে। তাই প্রথম টিমে ন’টা পরিবর্তনের মাশুল গুনতে হল ফ্রান্সকে।

তিউনিসার কোচ ফরাসি মাঝমাঠকে আটকাতে ৩-৪-২-১ টিম সাজিয়েছিলেন, তুলনায় দেঁশ ৪-৩-৩ ফর্মেশনে আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু টুকামেনি, ভেরামেনি, ফোফানার অনভিজ্ঞ মাঝমাঠ বারবার তিউনিয়ান শারীরিক মাঝমাঠের কাছে পরাজিত হচ্ছিল, আক্রমণে উঠে আসছিলেন আফ্রিকান যোদ্ধারা, মূলত স্ট্রাইকার খাজরি। মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণের এই খেলায় ৭ মিনিটে ফ্রান্সের ফাউল থেকে খাজরির তোলা বলে সেকেন্ড বারে বল গোলে ঢুকিয়ে দেন তিউনিশিয়ান রক্ষক নাদার গান্ডরি কিন্তু ক্ষণিকের তিউনিশিয়ান আনন্দ লাইন্সম্যানের পতাকায় থেমে যায়। এরপর ফ্রান্স আক্রমণ করলেও সেগুলো গোলমুখী ছিল না, তিউনিশিয়ান রক্ষণভাগে থাকা গান্ডরি, তালবিরা সাহসের সাথে মুয়ানি, গুন্ডোজি, কোমানদের আটকে দিতে থাকে। ফ্রান্সকে দুর্বল লেগেছে, তুলনায় তিউনিশিয়াকে অনেক সংঘবদ্ধ আর সাহসী লেগেছে।

দ্বিতীয় ভাগের শুরুতেই ফ্রান্সের শিবিরে বিপর্যয় নেবে আসে, লাইডাইনির পাশে খাজরির দৌড় আর বাঁপায়ের গোলে খাজরিই তখন তিউনিশিয়ার ‘বাঁ-পায়ের বিপ্লবী’। ১-০ গোলে পিছিয়ে পরে ফরাসি শিবির যখন দিকভ্রান্ত তখন গোটা তিউনিশিয়া আশায় বুক বাঁধছে, কারণ অস্ট্রেলিয়া ডেনমার্ক খেলা তখনও সমান সমান। কিন্ত ৫৯ আর ৬০ মিনিটে খাজরির চোট আর ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার গোল তিউনিশিয়ার দর্শকদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।ফরাসি কোচ খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি, ৬৩ মিনিটেই স্যালিবা, রাবিওট, এমবাপেকে নামিয়ে দেন। ধার বাড়তে থাকে ফরাসি আক্রমণ ভাগের। এমবাপে লেফট উইং-এ, গ্রিজম্যান মাঝে বারবার আক্রমণ করে তিউনিয়ার রক্ষণভাগকে ব্যস্ত করে দিলেও হার না মানা লড়াই ছাড়েনি তারা। কখনও গ্রিজম্যান তো কখনও এমবাপের শটকে প্রতিহত করতে থাকেন বিপক্ষের গোলকিপার আয়মেন ডামেন।

ম্যাচর অতিরিক্ত ৮ মিনিট ছিল চূড়ান্ত নাটকীয়, ফ্রান্সের আক্রমণ যখন বারবার প্রতিহত করতে করতে তিউনিশিয়া ক্লান্ত ঠিক তখনই একদম শেষ মিনিটে কোনাটের বাড়ানো বলে এমবাপের করা শট রিবাউন্ডে ঢুকিয়ে দেন গ্রিজম্যান। তিউনিশিয়ান শিবিরে যখন রণক্লান্তি আর পরাজয়ের বিষণ্নতা ঠিক তখনই রেফারি বাঁশি বাজিয়ে ভিএআৎ-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অফসাইডে গ্রিজম্যানের গোল বাতিল করে দেন, আনন্দের হাসি তিউনিশিয়ান দর্শকদের চোখে মুখে। যদিও পরের রাউন্ডে যাওয়া হচ্ছে না তিউনিশিয়ার, অস্ট্রেলিয়ার ডেনমার্ককে হারানোয় ৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় থাকতে হল তাদের। কিন্তু ইতিহাসকে বদলে দিল তিউনিশিয়া। ইতিহাসে কার্থেজকে (পড়ুন তিউনিশিয়া) রোম ‘ব্যাটেল অফ কার্থেজে’ পরাজিত করেছিল। কিন্তু ইউরোপীয় শক্তি ফ্রান্সের কার্থেজ জয় হল না। দেঁশ হয়তো শিক্ষা নেবেন।